ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার উচ্চ শিক্ষা | B.Sc for Diploma Engineers in abroad

B.Sc for Diploma Engineers in abroad – আজকাল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং- এর পর উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকেই দেশের বাইরে যাচ্ছেন। যদিও আমাদের দেশে বর্তমানে বেশ কিছু সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে, কিন্তু বাইরে থেকে অধ্যয়ন করে আসা ইঞ্জিনিয়ারদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা হয় অন্য লেভেলের। উন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তি আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে, সেখানে উচ্চশিক্ষা নিলে আমাদের শিক্ষার্থীদের টেকনিক্যাল, কমিউনিকেশন এবং সার্বিক দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অনেক বৃদ্ধি পায়। চাকরির সিভিতে এই অর্জনটি তাকে আর দশজন প্রার্থী থেকে আলাদা স্থান এনে দেয়। এসব কারনে আজকাল অনেক তরুণ বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং উচ্চশিক্ষার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকে। তবে এ ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান না থাকায় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় অনেকেই সফলতা পায় না।

সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে যে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে

  • বিদেশে পড়াটা আপনার আর্থিক অবস্থার উপর পুরোপুরি নির্ভর করে। বাইরে পড়তে গেলে টিউশন ফি, হোস্টেল ফি, বীমা ফি ইত্যাদির বাবদ প্রচুর খরচ আছে। সুতরাং প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন আপনি সে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবেন কিনা বা করলে সেটা কিভাবে।
  • খোঁজ নিন যে কোর্স করতে চান সেটা দেশে করা যায় কিনা। করা গেলে এখানে এবং বিদেশে কোথায় কি সুবিধা এবং কি অসুবিধা তুলনা করুন। নিশ্চিত করুন আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
  • পড়াশুনার খরচ জানার সহজ উপায় হল উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ভিজিট করা এবং বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীর ক্ষেত্রে টিউশন ফি দেখা।
  • ইংরেজি ভাষার দেশগুলোতে টিউশন ফি হয় অনেক বেশি। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশীপের ব্যবস্থা থাকে।
  • অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপের জন্য বা আবেদনের জন্য IELTS বা GMAT বা SAT বা GRE এর নির্দিষ্ট স্কোর প্রয়োজন পরে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্কোর পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়। এই স্কোরগুলোর কথা ভার্সিটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা থাকবে।
  • ইঞ্জিনিয়ারিং- এ উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। কারন, এই দেশের প্রযুক্তি বেশ উন্নত এবং পড়াশুনা ও জীবনযাপনের খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় কম।
  • কম খরচে এবং কম ঝামেলায় বিদেশে পড়তে চাইলে চীন বেশ ভাল একটি বিকল্প।
  • আপনি যদি চিন্তা করেন পড়াশুনার পাশাপাশি জব করে খরচ চালাবেন, তবে আপনাকে মনে রাখতে হবে সব দেশে বিদেশি স্টুডেন্টদের চাকরির সুযোগ থাকে না। আবার, কিছু কিছু রাষ্ট্রে সে দেশের ভাষা না জানলে চাকরি পাওয়া যায় না।
  • কোন দেশ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের সময় বিবেচনায় রাখুন সেখানের শিক্ষা ব্যবস্থা, খরচ, স্কলারশীপ ব্যবস্থা, আবাসন, আবহাওয়া, জীবনধারা, সংস্কৃতি।
  • যে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চান সেখানে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিন।
  • নির্বাচনের সময় প্রাথমিকভাবে একাধিক দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করুন। কারন, অনেক সময় ভিসা আটকে যায় বা ডাক আসেনা। সেক্ষেত্রে শিক্ষাবর্ষ পিছিয়ে যায়।

কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরের ধাপ হল ভিসা সংগ্রহ। মনে রাখতে হবে ভর্তির কাগজপত্রে উল্লেখিত ডেডলাইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌছাতে না পারলে ভর্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই ঐ সময়ের পূর্বে ভিসা হাতে পাওয়াটা বেশ জরুরি।

ভিসার আবেদনের জন্য দরকারি ডকুমেন্টস (B.Sc for Diploma Engineers in abroad)

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পন্ন হলে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে। তবে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাই শিক্ষার্থীর ভিসা পাঠিয়ে দেয়। সে সুবিধা না থাকলে, প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জমা দিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। ভিসার আবেদনের জন্য সাধারণত যেসব কাগজপত্রের দরকার হতে পারে-

  • যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান তার আবেদন ফর্ম।
  • সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও মার্কশীটের ফটোকপি। এক্ষেত্রে সব ধরনের সনদ এবং মার্কশীটগুলো ইংরেজি ভাষায় অনুদিত হতে হবে। যদিও বর্তমানে আমাদের দেশের এধরনের ডকুমেন্টগুলো বর্তমানে ইংরেজিতেই দেয়া হয়, তবু যদি কোন কাগজ বাংলায় থাকে তবে তা শিক্ষা বোর্ড অথবা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে ইংরেজিতে অনুবাদ করিয়ে নিতে হবে।
  • টিউশন ফির ব্যাংক ড্রাফট।
  • সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র।
  • রঙ্গিন পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
  • আর্থিক সচ্ছলতার প্রমানপত্র অথবা স্পন্সরের পক্ষ থেকে আর্থিক সচ্ছলতার নিশ্চয়তাপত্র বা সলভেন্সি সার্টিফিকেট।
  • পছন্দনীয় দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী ভাষাগত দক্ষতার প্রমানপত্র যেমন- TOFEL, IELTS, SAT, GRE, GMAT- এর স্কোর শীট।
  • পাসপোর্টের ফটোকপি। পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ১ বছর থাকতে হবে।
  • নিজ থানার পুলিশের ছাড়পত্র।

বাইরের অনেক দেশেই ইন্টারন্যাশনাল শিক্ষার্থীদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ব্যবস্থা আছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য শীর্ষ স্থানীয় কিছু দেশ হল-

  • ডেনমার্ক
  • সুইডেন
  • হাঙ্গেরি
  • তুর্কি
  • জার্মানি
  • ইউকে
  • অস্ট্রেলিয়া
  • সাউথ কোরিয়া
  • জাপান
  • সিঙ্গাপুর
  • ব্রাজিল
  • নেদারল্যান্ড

এর মাঝে শর্ত সাপেক্ষে কিছু কিছু দেশে স্কলারশিপে ফ্রীতে পড়ার সুযোগ আছে। অধিকাংশ  ক্ষেত্রে শর্ত হয় সে দেশের ভাষা জানা। জার্মানি, ব্রাজিল, নরওয়ে, গ্রিস, ল্যুক্সেমবার্গ, ফ্রান্স, সুইডেন, অস্ট্রিয়া হল তেমন কিছু দেশ।

বিদেশে উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্য ও সুবিধা

বর্তমানে নিয়োগকর্তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য সৃজনশীল লোক খোজেন যারা সংখ্যা এবং রিপোর্ট লেখার পাশাপাশি কার্যকরভাবে সমস্যা সমাধান করায় দক্ষতা আছে।

বিদেশে পড়াশোনা আপনাকে ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক বাধার মধ্য দিয়ে অন্যের সাথে কাজ করতে শেখায়। কঠোর পরিশ্রম, ডেডিকেশন এবং ধারণার বিনিময়ের ফলে তাদের জ্ঞান এবং কর্মদক্ষতা সাধারন শিক্ষার্থীদের তুলনায় অনেক ব্যতিক্রম হয়।

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো একটি উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আপনার স্বপ্নের চাকরিটি পাওয়ার জন্য বিদেশে উচ্চ শিক্ষার অভিজ্ঞতা আপনাকে সত্যিই অন্যান্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে পারে। বিশ্বায়নের এই যুগে নিয়োগকর্তারা এমন কাউকেই প্রাধান্য দেবেন যে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক, তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রয়াস আছে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে তাদের ব্র্যান্ডকে ইতিবাচক উপায়ে উপস্থাপন করার যোগ্যতা আছে। আপনার সিভিতে বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়ন উল্লেখ থাকলে বোঝা যাবে টেকনিক্যাল এবং যোগাযোগ দক্ষতা বেশ উন্নত।

B.Sc for Diploma Engineers in abroad

আগাম কিছু প্রস্তুতি

আপনি যে বিষয়ে পড়তে যাচ্ছেন, সে বিষয় সম্পর্কে জানুন। আর বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন সাবজেক্ট বেছে নিন চাকরির বাজারে নিজ দেশে এবং বিদেশে যার চাহিদা আছে। এই ব্যপারে বিভিন্ন ভার্সিটি এবং তথ্যকেন্দ্র গুলোতে আপনি খোঁজ নিতে পারেন। বিষয় নির্বাচন নিশ্চিত হলে বিদেশে যাওয়ার পূর্বে সম্ভব হলে ঐ বিষয়ে শর্ট কোর্স করে নিন। এটা আপনার পেশাগত দক্ষতাকে সমৃদ্ধ করবে।

যে দেশে যাচ্ছেন সেখানকার ইতিহাস, ঐতিহ্য, রীতি-নীতি সম্পর্কে জানুন। এতে করে সেখানে গিয়ে চলতে সহজ হবে। এবং নিজের কাজ করার অভ্যাস করুন, বিশেষ করে রান্না করাটা। কারন বাইরের দেশে আমাদের মত কাজের লোক, রাস্তার মোড়ে হোটেল, ক্যান্টিনের ব্যবস্থা থাকে না।

আরও জানতে পড়ুন

B.Sc for Diploma Engineers in Bangladesh

Related

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব এড়াবার মন্ত্র | Technical students

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব - বাংলাদেশে প্রধান প্রধান আর্থসামাজিক সমস্যাগুলোর...

পলিটেকনিক ভর্তি : চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

পলিটেকনিক ভর্তি - পলিটেকনিক ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পর যারা...

বেসরকারি পলিটেকনিক – এ পড়ার সুবিধা অসুবিধা

বেসরকারি পলিটেকনিক - পলিটেকনিকে পড়তে ইচ্ছুকরা সবাই কিন্তু সরকারি...

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল প্রক্রিয়া

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল - ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির পর অনেকেই...

অটোমাইগ্রেশন / Auto Migration কি? যেভাবে অন / অফ করবেন

অটো মাইগ্রেশন / Auto Migration - পলিটেকনিকে ভর্তির ক্ষেত্রে...