ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংঃ উচ্চ শিক্ষা, ক্যারিয়ার, দায়িত্ব

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা যান্ত্রিক প্রকৌশল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একটি প্রাচীনতম শাখা। এটি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখাও বটে। যদিও এটি প্রকৌশলে অনেক দীর্ঘকাল ধরে বিদ্যমান, কিন্তু উনিশ শতকের প্রথম দিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংকে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একটি পৃথক শাখা হিসেবে উন্নীত করা হয়।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মূলত প্রকৌশল, পদার্থ, গণিত এবং বস্তু  বিজ্ঞানের নীতি ব্যবহার করে যান্ত্রিক সিস্টেমের ডিজাইন, বিশ্লেষণ, তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। বর্তমানে সারা বিশ্বে ট্র্যাডিশনাল শিক্ষা ব্যবস্থার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা বেশ জনপ্রিয় এবং যুগোপযোগী। জেনারেল শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষায় নিশ্চিত কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা অনেক বেশি। শিল্পোন্নয়নের সাথে সাথে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বেড়েই চলেছে।

ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী এই বিষয়ে সামগ্রিক  জ্ঞান লাভ করতে পারে। হাতে কলমে শিক্ষার মাধ্যমে এই জ্ঞান থেকে পেশাগত দক্ষতা অর্জন সম্ভব। এই কোর্সের মাধ্যমে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গাণিতিক এবং বিশ্লেষণী দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দেয়া হয় এবং এই ক্ষেত্রে ব্যবহৃত টেকনোলজি ও ম্যাটেরিয়াল সম্পর্কে সাথে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা দেয়া হয়।

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মূলত যে বিষয়গুলো আছে সেগুলো হল- মেকানিক্স, গতিবিদ্যা, থার্মোডাইনামিক্স, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, স্ট্রাকচারাল এনালাইসিস  এবং ইলেক্ট্রিসিটি। এই মূল বিষয়গুলো ছাড়াও কম্পিউটার-এডেড ডিজাইন (সিএডি), কম্পিউটার-এডেড ম্যানুফ্যাকচারিং (সিএএম) এবং পণ্য জীবনচক্র ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি সম্পর্কেও ধারনা দেয়া হয়।  

কোথায় করবেন ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

সারা দেশ জুড়ে ৪৯ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং –এ ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সহ আরও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করা যায়।

ভর্তির যোগ্যতা

চার  বছর মেয়াদি আট সেমিস্টারের এই কোর্সে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার পর যে কোন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই কোর্সে ভর্তি হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে পরীক্ষার্থীকে সর্বোচ্চ আট বছর আগের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায়  কমপক্ষে GPA 2.00 পেয়ে পাশ করতে হবে। তবে নীতিমালা পরিবর্তন হতে পারে, সেক্ষেত্রে আপডেটেড তথ্য প্রযোজ্য হবে।

ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং

ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মান

ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটির মান HSC সার্টিফিকেটের তুলনায় বেশি, তবে এর মান স্নাতক এবং বিএসসি ডিগ্রির তুলনায় কম। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং হল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রবেশিক স্তর।  

একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব

একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার কোন একটি কাজ সম্পাদনের জন্য কাজটির ধারনাকে সৃজনশীলতা,জ্ঞান এবং বিশ্লেষনধর্মী প্রক্রিয়ার মধ্যে সমন্বয় করার মাধ্যমে বাস্তবে রূপ দান করেন। একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে যে সকল দায়িত্ব পালন করতে হয় সেগুলো হল-

  • প্রকল্পের আবশ্যিক শর্ত নির্ধারন করা।
  • যান্ত্রিক উপাদান, ডিভাইস এবং ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতা পরিমাপ করা।
  • কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন/ মডেলিং সফটওয়্যার ব্যবহার করা।
  • টেকনিক্যাল পরামর্শ দেয়া।
  • রক্ষণাবেক্ষন এবং মডিফাইয়ের মাধ্যমে যন্ত্রাংশের নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা ও এর কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করা।
  • পণ্যের পরিক্ষণ, মূল্যায়ন, পরিবর্তন এবং পূনঃমুল্যায়ন করা।
  • ডাটা এনালাইসিস এবং এর ব্যাখ্যা প্রদান করা।
  • ম্যানেজার ও ক্লায়েন্টদের জন্য ডিজাইন উপস্থাপন করা।
  • প্রকল্পের ব্যয়, প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ এবং বাজেট প্রণয়নে সহায়তা করা।
  • তাত্ত্বিক ডিজাইনকে সিমুলেশনের মাধ্যমে যাচাই করে  প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের মাধ্যমে কার্যকরী করে তোলা।  

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে প্রায়ই প্রতিটি ক্ষেত্রে। সরকারি, বেসরকারি সেক্টরে এমন কি দেশের বাইরেও তাদের চাহিদা রয়েছে। উল্লেখ্যযোগ্য কিছু কর্মক্ষেত্র হল-  

  • ইঞ্জিনিয়ারিং, ট্রান্সপোর্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং, কন্সট্রাকশন এবং প্রসেসিং কোম্পানি।
  • পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা কেন্দ্র সহ অন্যান্য বৃহত্তম সরকারি প্রতিষ্ঠান।
  • R & D বেইজড কোম্পানি।
  • কনসালটেন্সি এজেন্সি।
  • সিভিল সার্ভিস।
  • রেলওয়ে, বিমান, অটোমোবাইল, রিফাইনারি ইন্ডাস্ট্রি।
  • আর্মড ফোর্স।
  • সরকারি এজেন্সি।
  • ইউটিলিটিজ ( গ্যাস,পানি, বিদ্যুৎ প্রভৃতি ) কোম্পানি।

সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যদি বেশ কিছু বছরের অভিজ্ঞতা থাকে তবে চুক্তিভিত্তিক কাজ এবং কনসালটেন্সির মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান ও সম্ভব।

উচ্চ শিক্ষার সুযোগ

  • মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা শেষে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে B.sc করা যায়।
  • A.M.I.E  পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমেও BSc ডিগ্রি অর্জন সম্ভব।
  • এছাড়া অনেকেই দেশের বাইরেও যায় উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য।

ক্যারিয়ার হিসেবে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ে সম্ভাবনাময়  ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ রয়েছে। কম্পিউটার, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, টেক্সটাইল ও সিভিল টেকনোলজি সবই মেকানিক্যাল টেকনোলজির সাথে জড়িত। সকল ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য মেকানিক্যাল টেকনোলজি অপরিহার্য। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের বিস্তর কর্মক্ষেত্র রয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি সেক্টরে।

  • মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা অর্জনের পর ২য় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে চাকরির সুযোগ আছে।
  • সরকারি, বেসরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে জুনিয়র ইন্সট্রাকটর হিসেবে।
  • সরকারি ও বেসরকারি চাকরির পাশাপাশি দেশের বাইরেও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা আছে।
  • পছন্দমত  ব্যবসা এবং কনসালটেন্সির মাধ্যমেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়।

এন্ট্রি লেভেলে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করলেও নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রমোশনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বলে এক সময় প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে অরোহণ করা সম্ভব।

 একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের আয়

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ সফলভাবে ডিপ্লোমা পর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেল এ চাকরি শুরু করা যায়, তবে সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়। সরকারি সেক্টরে এন্ট্রি লেভেলে সহকারি প্রকৌশলী হিসেবে বেতন শুরু হয় প্রায় ৩২,০০০ টাকা থেকে। যদিও এটা কোম্পানির উপর নির্ভর করে। যাদের অভিজ্ঞতা নেই তাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি ১৫,০০০ টাকা শুরু করে থাকে।

বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং অভিজ্ঞ প্রকৌশলিদের বেসরকারি খাতে আয় মাসে লক্ষাধিক হওয়ারও নজির আছে ।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার কোন বিকল্প নেই। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে আধুনিক টেকনোলজির ব্যবহার যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমাদের দেশ সহ বিশ্বের সকল দেশেই চাকরির বাজারে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকরির বিভিন্ন সার্কুলারগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে আমরা তাই দেখতে পাই। সুতরাং দেশের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে ব্যক্তিগত ও জাতীয় পর্যায়ে সমৃদ্ধি আনার জন্য উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার হতে পারে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।

ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অন্যান্য কোর্স সম্পর্কে জানুন

ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং

ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং

ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং

ট্যাগসমূহঃ

মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং জব, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং pdf, বাংলাদেশে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের বেতন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্টারভিউ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশ্ন, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি বই, ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ কি।

Related

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব এড়াবার মন্ত্র | Technical students

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব - বাংলাদেশে প্রধান প্রধান আর্থসামাজিক সমস্যাগুলোর...

পলিটেকনিক ভর্তি : চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

পলিটেকনিক ভর্তি - পলিটেকনিক ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পর যারা...

বেসরকারি পলিটেকনিক – এ পড়ার সুবিধা অসুবিধা

বেসরকারি পলিটেকনিক - পলিটেকনিকে পড়তে ইচ্ছুকরা সবাই কিন্তু সরকারি...

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল প্রক্রিয়া

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল - ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির পর অনেকেই...

অটোমাইগ্রেশন / Auto Migration কি? যেভাবে অন / অফ করবেন

অটো মাইগ্রেশন / Auto Migration - পলিটেকনিকে ভর্তির ক্ষেত্রে...