ইন্টারভিউর প্রশ্নের উত্তর | ইন্টারভিউতে যে সকল কমন প্রশ্ন করা হয়

ইন্টারভিউর প্রশ্নের উত্তর – চাকরির ইন্টারভিউতে সহজ খুব প্রচলিত কিছু প্রশ্ন যেমনি করা হয়, তেমনি কিছু প্রশ্ন থাকে যাদের বেশ সাধারণ মনে হলেও উত্তর দিতে হয় কৌশলে। একটি পদের বিপরীতে কোন চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে আসে অনেকেই। এই প্রশ্নগুলোর বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর দেয়ার মাধ্যমেই আপনি নিয়োগদাতাদের দৃষ্টিতে অনেকের মাঝে তাদের পছন্দের প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন। চাকরিটি হতে পারে আপনার। এগুলো এমন কিছু টপিক যা একেক জায়গায় একেক ভাবে আপনার সামনে উপস্থাপিত হতে পারে, তবে মূল বক্তব্য একই। এধরনের ইন্টারভিউর কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়ার কৌশল নিয়েই আজকের লিখাটি।

১। নিজের সম্পর্কে বলুন

এটি সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত জনপ্রিয় একটি প্রশ্ন। কারণ এটি শুনতে খুব সাধারণ হলেও উত্তর দেওয়া খুব কঠিন। এধরনের প্রশ্নের উত্তর যথাসম্ভব পেশাদার রাখার চেষ্টা করুন। এখানে আপনার ব্যক্তিগত বিবরণ দেয়ার দরকার নেই।

ইন্টারভিউর এধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বলুন আপনি কীভাবে আপনার ক্যারিয়ার বা আপনার বর্তমান কাজের লাইনটি শুরু করেছিলেন। সেখান থেকে শুরু করে কী অর্জন করেছেন, কী কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই পর্যায়ে এসেছেন, ভবিষ্যতে কী করতে চাইছেন এবং আপনি কেন চাকরি খুজছেন বলে শেষ করুন।

উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখুনঃ

  • শুধুমাত্র আপনার জীবনের প্রফেশনাল অংশের উপর ফোকাস করুন।
  • ২ মিনিটের মধ্যে শেষ করুন।
  • ব্যক্তিগত দিক শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।

২। পুর্বের চাকরি ছাড়ার কারণ কি?

ইন্টারভিউর এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় আপনাকে বেশ সতর্ক হতে হবে।

যদি আপনি আপনি নিজেই চাকরিটি ছেড়ে আসতে চান, তবে উত্তর দেয়ার সময় ইতিবাচক থাকুন এবং নেতিবাচক বিষয়গুলি এড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত থেকে আপনি কী অর্জন করতে চেয়েছিলেন সে সম্পর্কে ফোকাস করুন।

যদি আপনি বরখাস্ত হন, তবে অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী শিখেছেন এবং এটি আবার না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য আপনি কী করেছেন তা বলুন। এভাবে ইতিবাচক রূপে উপস্থাপন করতে হবে।

উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখুনঃ

  • বক্তব্য পরিষ্কার রাখুন। 
  • পুর্বের প্রতিষ্ঠানের ব্যপারে নেতিবাচক কিছু বলা থেকে বিরত থাকুন।
  • সহকর্মীর সাথে মতবিরোধ বা তর্ক করার কারণে পদত্যাগ করার কথা কখনো বলবেন না।
  • এমন কিছু বলবেন না যাতে মনে হয় অর্থই এখানে আপনার প্রধান লক্ষ্য।
  • তথ্য গোপন করার বা প্রশ্ন এড়ানোর চেষ্টা করবেন না, এটি কেবল সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর কাছ থেকে আরও প্রশ্ন এবং সন্দেহের দিকে পরিচালিত করবে।

ইন্টারভিউর প্রশ্নের উত্তর / ইন্টারভিউতে যে সকল কমন প্রশ্ন করা হয়

৩। আপনার দুর্বলতা কি?

প্রশ্নকারী যখন আপনাকে জিজ্ঞাসা করে “আপনার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কী?”, এর উত্তরে আপনার এমন কোন দুর্বলতাকে উপস্থাপন করুন যা ব্যক্তিত্ব-ভিত্তিক নয় বরং দক্ষতা ভিত্তিক। কখনই বলবেন না যে অন্যের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনার সীমাবদ্ধতা আছে কিংবা কোন মতবিরোধের সমাধান ক্ষেত্রে আপনার অপারগতা বা ম্যানেজমেন্টের  নির্দেশনায় আপনি চলতে পছন্দ করেন না ইত্যাদি।

সুতরাং এমন একটি নির্দিষ্ট দক্ষতায় দুর্বলতার কথা বলুন যা আপনার বর্তমান পেশাকে তেমন একটা প্রভাবিত করবে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কাজ ডেটা এন্ট্রি হয় এবং এক্সেল স্প্রেডশিটে আপনার দুর্বলতা থাকে, তবে আপনি এক্সেলে আপনার দুর্বলতার কথা বলবেন না। এক্ষেত্রে বরং বলতে পারেন যে, টীম ওয়ার্কের ক্ষেত্রে আপনি কম্ফোর্ট ফিল করেন না। অবশেষে, নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য আপনি কী করছেন তা ব্যাখ্যা করে আপনার উত্তরটি শেষ করুন।

উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখুনঃ

  • “আমি খুব পরিশ্রম করি” এর মতো নকল দুর্বলতা দেখাবেন না।
  • তাদের বলবেন না যে আপনার কোনও দুর্বলতা নেই।
  • কোনও ব্যক্তিত্ব-ভিত্তিক দুর্বলতার নাম রাখবেন না। যেমন – সহকর্মীদের সাথে চলতে আমার সমস্যা হয়। 
  • এমন কোনও দুর্বলতার নাম রাখবেন না যা তাদের চাকরিতে সফল হওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করবে।

৪। ৫/১০ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

তিনটি বড় কারণ রয়েছে যা জানার জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করে থাকেন-

  • তারা জানতে চায় যদি আপনার পেশা নিয়ে আপনার ভবিষ্যত চিন্তা কি।
  • তারা নিশ্চিত করতে চায় যে আপনি উচ্চাভিলাষী এবং কঠোর পরিশ্রমী।
  • তারা নিশ্চিত করতে চায় যে তারা আপনাকে যে পদে নিচ্ছে তার সাথে আপনার লক্ষ্যগুলির সাথে খাপ কিনা।  

সুতরাং, আপনার কাজের সাথে সম্পর্কিত এমন একটি লক্ষ্য বেছে নিন এবং নিশ্চিত করুন যে এটি সামান্য চ্যালেঞ্জিং এবং যাতে আপনার উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায়।  কখনোই সরাসরি বলবেন না যে “আমি এখন থেকে ৫ বছর পরে নিজেকে একই অবস্থানে দেখছি।”

এবং এমন একটি লক্ষ্য নির্ধারন করুন যা আপনি যে কাজের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন তার সাথে সম্পর্কিত এবং আপনাকে তাদের বোঝাতে হবে এই চাকরিতে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন তা আপনার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যগুলো অর্জনে সহায়তা করবে।

উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখুনঃ

  • নিজেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং অনুপ্রাণিত হিসেবে উপস্থাপন করুন।
  • বাস্তববাদী হতে হবে। আপনি এন্ট্রি-লেভেল থাকলে ৫ বছরে সিইও হতে চান এমনটি বলবেন না।
  • আপনার উত্তরটি এই কাজের সাথে সম্পর্কিত কিনা তা নিশ্চিত করুন। তারা আপনাকে এমন একটি কাজের জন্য নিয়োগ দেবে না যা আপনার ৫ বছরের লক্ষ্যের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
  • বলবেন না যে আপনি এ ব্যাপারে চিন্তা করেন নি বা নিশ্চিত নন।

৫। কেন আপনাকে নিয়োগ দিব?

“আমরা আপনাকে নিয়োগ করব কেন” এই প্রশ্নটির মাধ্যমে নিয়োগকর্তারা আসলে বুঝতে চান আপনি এই পদে আপনার ভূমিকাটি কতটুকু বুঝতে পারছেন এবং আপনার দক্ষতা কীভাবে তাদের সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি।

ইন্টারভিউর এধরনের প্রশ্নের উত্তর এমন ভাবে দিন যাতে তারা বুঝতে পারে যে তাদের প্রতিষ্ঠান এবং পদটি সম্পর্কে আপনি ভালো ধারনা রাখেন। এটি স্পষ্ট করুন যে এই জবের সাথে কি কি কাজ জড়িত তা আপনি জানেন এবং আপনি তা সম্পাদন করতে প্রস্তুত। তারা আপনাকে নিয়োগ দিলে তাদের পক্ষে আর কি ভাল হবে আপনার দক্ষ্যতা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কিভাবে সহায়তা করবে তা বলুন।

উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখুনঃ

আপনার দক্ষতা এবং ক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হন।

নির্দিষ্ট কাজ সম্পর্কে কথা বলুন যা আপনি তাদের করতে সহায়তা করতে পারেন বা তারা আপনাকে নিয়োগ দিলে অর্জন করতে পারে।

“আমি জানি না” বা “আপনার যাকে ইচ্ছা নিয়োগ দেওয়া উচিত” জাতীয় উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

৬। আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কি জানেন?

নিয়োগকর্তার ইন্টারভিউর বোর্ডে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখবেন এই প্রশ্নটি করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনি তাদের প্রতিষ্ঠান ও পদটি সম্পর্কে কতটুকু জানেন বা আদৌ কিছু জেনে আবেদন করেছেন কিনা তা জানা।

সুতরাং, এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য আপনাকে আগেই প্রতিষ্ঠানটির সম্পর্কে খোজ খবর নিতে হবে। সেটা হতে পারে কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে কিংবা কোন আর্টিকেল থেকে অথবা লিঙ্কডইন থেকে।

উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখুনঃ

  • পরিষ্কার ধারনা রাখুন তারা কী ধরনের শিল্পে রয়েছে, কী বিক্রি করে এবং কীভাবে অর্থোপার্জন করে।
  • তাদের প্রতিষ্ঠানের আকার সম্পর্কে কিছুটা বোঝার চেষ্টা করুন। যেমন – তাদের কর্মচারির সংখ্যা কেমন প্রভৃতি।
  • উত্তর এমন ভাবে দিন যাতে তিনি বুঝতে পারেন আপনি তাদের প্রতিষ্ঠান নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং আপনি তাদের সাথে সাক্ষাত্কার নিয়ে আগ্রহী।  
  • ভুল বা আপনি নিশ্চিত নন এরকম কিছু উল্লেখ্য করা থেকে বিরত থাকুন।

এছাড়াও কিছু বিষয় আছে যেগুলো কোন ইন্টারভিউতে বসার সময় এবং ইন্টারভিউর প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় অবশ্যই মাথায় রাখবেন। কারণ, এগুলোর উপর আপনার ব্যাপারে নিয়োগকর্তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে তা নির্ভর করে এবং এই সাথে আপনার চাকরিটি পাওয়ার সম্ভাবনাও।

  • প্রশ্নগুলি ভেবেচিন্তে উত্তর দিনঃ কোনও প্রশ্নের জিজ্ঞাসা করা মাত্রই তার উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রশ্নটি শোনার পর এটা নিয়ে খানিক চিন্তা করে তারপর গুছিয়ে উত্তর দিন।
  • যথাযথ ভাষা ব্যবহার করুনঃ সাক্ষাৎকারের সময় আপনি পেশাদার শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করেছেন তা নিশ্চিত করুন।
  • প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুনঃ সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা বাঞ্ছনীয় কারণ এর ফলে নিয়োগদাতারা বুঝবে যে আপনার প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আগ্রহ রয়েছে।
  • সততা বজায় রাখুনঃ আপনার সিভিতে কোন দক্ষতা বা নির্দিষ্ট জ্ঞানের বিষয়ে মিথ্যা বলবেন না। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীরা সহজেই এব্যাপারটা ধরে ফেলতে পারেন আপনার পদটি না পাবার কারণ হতে পারে। যদি এমন কোন দক্ষতার ব্যপারে আপনাকে জিজ্ঞাস করা হয় যেটা আপনার নেই, তবে সত্য উত্তরটিই দিন এবং বলুন এর অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা আপনার নেই, তবে এটি শিখতে আগ্রহী।
  • খুব বেশি কথা বলবেন নাঃ আপনি যদি নিজের সাক্ষাৎকারে খুব বেশি কথা বলেন তবে এমন হয়ে যেতে পারে যে উচিত নয় এমন কোন কথা আপনি বলে ফেললেন যেটা আপনি কখনোই চান না।
  • মরিয়া আচরণ করবেন নাঃ আপনি যদি সত্যিই কোনও নির্দিষ্ট কাজ চান তবে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর সাথে কথা বলার সময় এমন কোন কথা বা আচরণ করবেন না যাতে আপনার মরিয়া হয়ে উঠা প্রকাশ পায়।
  • দেরি করবেন নাঃ একটি ইন্টারভিউতে করা সবচেয়ে খারাপ কাজ এটি। এর মানে হল আপনি কাজটির ব্যাপারে আন্তরিক না। আপনার যদি দেরি হওয়ার সত্যিকারের কারণ থাকে তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করুন এবং পরবর্তী সময় বা তারিখের জন্য সাক্ষাৎকারটি রিশিডিউল করুন।

ট্যাগসমূহ

ইন্টারভিউর প্রশ্নের উত্তর, চাকরির ভাইভার কিছু কমন প্রশ্ন, কিভাবে ইন্টারভিউ দিতে হয়, মার্কেটিং জব ইন্টারভিউ প্রশ্ন, ইন্টারভিউ প্রস্তুতি, আপনি কেন এই জব টি করতে চান, চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল, ইন্টারভিউতে যে সকল কমন প্রশ্ন করা হয়

Related

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব এড়াবার মন্ত্র | Technical students

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব - বাংলাদেশে প্রধান প্রধান আর্থসামাজিক সমস্যাগুলোর...

পলিটেকনিক ভর্তি : চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

পলিটেকনিক ভর্তি - পলিটেকনিক ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পর যারা...

বেসরকারি পলিটেকনিক – এ পড়ার সুবিধা অসুবিধা

বেসরকারি পলিটেকনিক - পলিটেকনিকে পড়তে ইচ্ছুকরা সবাই কিন্তু সরকারি...

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল প্রক্রিয়া

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল - ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির পর অনেকেই...

অটোমাইগ্রেশন / Auto Migration কি? যেভাবে অন / অফ করবেন

অটো মাইগ্রেশন / Auto Migration - পলিটেকনিকে ভর্তির ক্ষেত্রে...