আমাদের আধুনিক জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রি। বিশ্ব জুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এতটাই হয়েছে যে এখন পৃথিবী যেন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। যেটা আসলে ইলেকট্রনিক্স তথা ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের ছাড়া অসম্ভব। ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং- এ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বর্ণালী গবেষণা এবং ব্যবহার করে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, ট্রানজিস্টর ইত্যাদি ইলেকট্রনিক ডিভাইসের অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করা হয়। ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়াররা মূলত বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যেমন- টিভি, ফ্রিজ, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ইত্যাদি ডিজাইন, তৈরি ও ডেভলপ করে। এছাড়া টেলি কমিউনিকেশন, রোবোটিক্স, হার্ডওয়্যার, পাওয়ার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম উৎপাদন ও উন্নয়নের কাজগুলোও তারা করে থাকেন।
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর একটি শাখা যেখানে ইলেক্ট্রনিক্সের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান দেয়া হয়। ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বৈদ্যুতিক বিষয়ক সার্কিট, বৈদ্যুতিক প্রকৌশল উপাদান, পাওয়ার ইলেকট্রনিক্স, এমবেডেড সিস্টেম, উন্নত উপকরণ সিস্টেম, বৈদ্যুতিক এবং ইলেকট্রনিক্স মেশিন এবং পরিমাপ বিষয়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা ইলেকট্রনিক সার্কিট, কম্পিউটার সিস্টেমের ডিজাইন, নিয়ন্ত্রণ এবং বিকাশ সম্পর্কে শিখে।
কোথায় করবেন ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
সারা দেশ জুড়ে ৪৯ টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং –এ ডিপ্লোমা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, গ্রিন ইউনিভার্সিটি সহ আরও কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ ডিপ্লোমা করা যায়।
ভর্তির যোগ্যতা
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং -এর চার বছর মেয়াদি আট সেমিস্টারের এই কোর্সে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার পর যে কোন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া সম্ভব। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড নীতিমালা প্রয়োগ হয়ে থাকে।
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংএর মান
ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা কোর্সটির মান HSC সার্টিফিকেটের তুলনায় বেশি, তবে একই বিষয়ের বিএসসি ডিগ্রির তুলনায় কম। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং হল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রবেশিকা স্তর।
একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব
একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের কাজগুলো বেশ বৈচিত্রপূর্ণ এবং জটিল। তাদের অনেক বড় পরিসরে দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়।
- ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিকের সাথে গ্ণিত এবং বিজ্ঞানের সমন্বয় করে টেলি কমুনিকেশন সিস্টেমের ডিজাইন, তৈরি, স্থাপন ও রক্ষনাবেক্ষণ করা।
- বিভিন্ন ক্ষেত্রে কন্ট্রোল এবং মনিটরের জন্য ব্যবহৃত প্রক্রিয়া, সিস্টেম এবং যন্ত্রাংশের ডিজাইন ও এসব পরিচালনা করা।
- তাপমাত্রা ও চাপ কন্ট্রোল এবং বিভিন্ন ম্যানুফাকচারিং কোম্পানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সিস্টেম ডিজাইন ও তা ব্যবহার করা।
- প্রোজেক্ট পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরি করা।
- ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস তৈরির জন্য বিবরণ লিখা এবং তাত্ত্বিক ডিজাইন তৈরি করা।
- টেকনিক্যাল রিপোর্ট লিখা এবং টেকনোলজি্র উন্নয়নের সাথে আপ-টু-ডেট থাকা।
- অপারেটিং সিস্টেমের মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও ভুল সংশোধন করা।
- Computer-assisted engineering(CAE) এবং ডিজাইন সফটওয়্যার ও সরঞ্জাম ব্যবহার করে প্রকৌশলের কাজ সম্পাদন করা।
- বাণিজ্যিক, শিল্প, চিকিৎসা, সামরিক, বা বৈজ্ঞানিক অ্যাপ্লিকেশন জন্য ইলেকট্রনিক উপাদান, সফ্টওয়্যার, পণ্য, বা সিস্টেম ডিজাইন করা।
- বৈদ্যুতিক উপাদান এবং সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরীক্ষার পদ্ধতি বিকাশ করা।
- সিস্টেম মূল্যায়ন এবং নকশা পরিবর্তন বা সরঞ্জাম মেরামতের সুপারিশ করা।
- প্রযুক্তিগত কর্মক্ষমতা উন্নত করার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, সিস্টেম,অ্যাপ্লিকেশনের পরিবর্তন,বিকাশ এবং পরিবর্ধন করা।
ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র
ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের কর্মক্ষেত্র বিস্তর পরিধির। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অনেক ক্ষেত্র আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে রয়েছে-
- বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
- বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার।
- সরকারি হাসপাতালে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার।
- পাওয়ার প্লান্ট, ইলেকট্রিক্যাল গ্রীড কোম্পানী।
- বিটিসিএল, অপটিক্যাল ফাইবার কোম্পানী।
- টেলিফোন বোর্ড।
- সরকারী ভোকেশনাল শিক্ষক।
এছাড়া বেসরকারি হাজারো প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা অনেক।
- ইলেকট্রনিক্স গুডস কোম্পানী যেমন- মোবাইল ফোন, রেডিও, টিভি, পিসি, ট্যাবলেট এবং এটিএম মেশিন প্রস্তুতকারক কোম্পানী।
- টেলিভিশন চ্যানেল।
- মোবাইল অপারেটর কোম্পানী, কমিউনিকেশন কোম্পানী।
- ইন্ডাষ্ট্রিয়াল অটোমেশন সেক্টরে।
- বৈজ্ঞানিক গবেষণা – উপগ্রহ, শব্দবিজ্ঞান, অপটিক্স, পদার্থবিদ্যা এবং ন্যানো প্রযুক্তি।
- মেডিকেল ডিভাইস এবং চিকিৎসা যন্ত্র নির্মাতা।
- বিমান এবং মহাকাশ কোম্পানি।
- উৎপাদন খাত – প্রোগ্রামেবল লজিক নিয়ন্ত্রণ (পিএলসি) এবং শিল্প যন্ত্রপাতি ডেভেলপার হিসেবে।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগ
ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা শেষে একজন শিক্ষার্থী জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিএসসি করতে পারে বেশ কয়েকটি বিষয়ে। এগুলো হল-
- বিএসসি ইন ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল
- বিএসসি ইন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইলেক্ট্রনিক্স
- বিএসসি ইন ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকম্যুনিকেশন
- বিএসসি ইন মেকাট্রনিক্স
- বিএসসি ইন ইন্সট্রমেন্টাল। এছাড়া AMIE সার্টিফিকেট অর্জন করেও প্রফেশনালি বেশ এগিয়ে যেতে পারবে।
একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের আয়
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সটি সম্পন্নের পর এন্ট্রি লেভেলে প্রতিষ্ঠান ও পদ অনুযায়ী বেতন হতে পারে ২০-৪০ হাজার টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এটা আরও কম। তবে অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে বেতন বাড়তে থাকে।
ক্যারিয়ার হিসেবে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে দ্রুত গতির প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়নে দক্ষ প্রকৌশলী বন্টন ব্যবস্থার নকশা করার জন্য ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশলীদের চাহিদা বেড়েই চলেছে।
সোলার অ্যারে, সেমিকন্ডাক্টর এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবনের জন্য, দেশের বিদ্যুৎ গ্রিডগুলি আপগ্রেড করার জন্য দরকার ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের। এছাড়া প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে বাড়ছে বিভিন্ন ইলেকট্রিক গ্যাজেট ব্যবহার, যেগুলোর তৈরী, বিকাশ, উন্নয়ন সবকিছুই হয় এই ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে। দৈনন্দিন জীবন সহজ থেকে সহজতর হওয়া সম্ভব হচ্ছে ইলেকট্রনিক্সের কারনে। এসব দেখে বোঝা যায় যে, ভবিষ্যৎ- এ ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা আরও বাড়বে।
এছাড়া ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অন্যান্য কোর্স সম্পর্কে জানতে পড়ুন
ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং