ব্যবসার জন্য পুঁজি সংগ্রহের বিভিন্ন উৎস

ব্যবসার জন্য পুঁজি – একটি ব্যবসা শুরু করতে প্রয়োজন হয় অর্থের। ব্যবসা শুরু করার অন্যতম প্রধান এবং গুরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল তহবিল সংগ্রহ করা। একটি নতুন ব্যবসার জন্য পুঁজি সংগ্রহের জন্য রয়েছে অনেক ক্ষেত্র। তবে আপনি কীভাবে এবং কোন বিকল্প ব্যবহার করে আপনার ব্যবসায়ের তহবিল সংগ্রহ করছেন তা আপনার ব্যবসায়ের কাঠামো এবং পরিচালনাকে প্রভাবিত করতে পারে। এরকম কিছু জনপ্রিয় ফান্ডিংয়ের উৎস নিয়ে আজকের আলোচনা।

ব্যবসার জন্য পুঁজি সংগ্রহের জনপ্রিয় কিছু উৎস-

বুটস্ট্র্যাপিং  

স্ব-তহবিল, যা বুটস্ট্র্যাপিং নামেও পরিচিত যা স্টার্টআপ ফিনান্সিংয়ের একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। বিশেষত যখন সম্ভাব্য সাফল্যের পরিকল্পনা না দেখাতে পারলে প্রায়শই নতুন উদ্যোক্তাদের তহবিল পেতে সমস্যা হয়। আপনি আপনার নিজের সঞ্চয় থেকে বিনিয়োগ করতে পারেন যেখানে বাড়তি কোন খরচ এবং ফর্মালিটি কিছুই থাকবে না।

ঋণ অর্থায়ন

নতুন কোন ব্যবসা শুরুর জন্য জনপ্রিয় একটি পুঁজি সংগ্রহের উৎস হল ঋণ। বিভিন্ন উৎস থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট হার সুদের বিনিময়ে ঋণ গ্রহণ করা যায়। ঋণ অর্থায়ন জামানতসহ অথবা জামানত বিহীন হতে পারে। হতে পারে স্বল্প মেয়াদি অথবা দীর্ঘ মেয়াদি। স্বল্প মেয়াদি ঋণ সাধারণত ব্যবসা পরিচনার জন্য নেয়া হয় আর দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ নেয়া হয় ভবন নির্মান বা সরঞ্জাম ক্রয়ের উদ্দেশ্যে।

লাভ মানি

নতুন ব্যবসায় পুঁজির ক্ষেত্রে আরেকটি নির্ভরযোগ্য উৎস হল পরিবার, আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধব যার জন্য একে লাভ মানি বলা হয়। এই ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে অধিকাংশেই সুদের বা লভ্যাংশ প্রদানের কোন শর্ত থাকে না। অর্থায়ন বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ঋণকে “Patient capital” বলে থাকেন, কারণ এই ধরনের ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয় যখন ব্যবসায়ে লাভ বাড়তে থাকে। তবে এই ক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে অনেক সময় বিনিয়োগকারী এই টাকার পরিবর্তে ব্যবসার ইক্যুটি আশা করতে পারেন।

ব্যাংক এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ঋণদানকারী সংস্থা

ব্যবসায়ে ঋণের মাধ্যমে পুঁজি সংগ্রহের অন্যতম জনপ্রিয় উৎস হল বিভিন্ন ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ঋণ প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান। ব্যাংক ব্যবসায়ের জন্য দুই ধরণের অর্থ সরবরাহ করে। একটি হল কার্যকরী মূলধন লোন এবং অন্যটি ফান্ডিং। তবে এই ধরনের ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রেও ঋণগ্রহীতাকে ব্যবসায়িক পরিকল্পনা, শেয়ার ও শেয়ারের মূল্যায়নের বিশদ, ইতিবাচক ট্র্যাক রেকর্ড এবং প্রচুর পরিমাণে জামানতের ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু চলমান ব্যবসার ক্ষেত্রে লাভ ক্ষতির বিবৃতি, ক্যাশ ফ্লো’র বাজেট এবং নেট মূল্য বিবরণী সরবরাহ করা গেলে অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণ করা যায়।

বাণিজ্যিক অর্থায়ন সংস্থা

অন্যান্য কমার্সিয়াল উৎস থেকে ফান্ড পাওয়া না গেলে কমার্সিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে অর্থায়নের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসার প্রফিট-লসের হিসাবের তুলনায় লোন পরিশোধের জন্য জামানত মানের উপর আগ্রহী হয়ে থাকে। তবে ফিনান্স সংস্থার এই ঋণের ব্যয় সাধারণত অন্যান্য বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।

সরকারী অর্থায়ন কর্মসূচি

বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে নতুন ব্যবসা উদ্যোগ এবং ছোট ব্যবস্যয়ীদের সহায়তা করার জন্য কর্মসূচি নেয়া হয়। এই সহায়তা প্রায়শই ঋণদাতাদের কাছ থেকে লোন পরিশোধের সরকারী গ্যারান্টি আকারে হয়ে থাকে। গ্যারান্টিটি এমন কোনও ব্যবসায়ির ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে যার জামানত প্রদানের জন্য যথেষ্ট সম্পদ নেই।  এরকম কিছু কর্মসূচি হলস্টার্টআপ বাংলাদেশ, ইনোভেশন ফান্ড, আইসিটি ডিভিশন ফান্ড, ইত্যাদি।

নতুন ও পুরনো যে কোনো উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ৫ ধরনের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল চালু রয়েছে। এসব তহবিলের সুদহার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এছাড়া নারীদের উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা।

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর

অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর হল যাদের যথেষ্ট অলস অর্থ এবং নতুন কোন ব্যবসায় বিনিয়োগের আগ্রহ রয়েছে। এই ধরনের বিনিয়োগকারীরা মূলধনের পাশাপাশি পরামর্শদাতা হিসেবেও ভূমিকা রাখতে পারে। গুগল, ইয়াহু এবং আলিবাবার মত উল্লেখ্যযোগ্য অনেক প্রতিষ্ঠানই চালু করা সম্ভব হয়েছে অ্যাঞ্জেল বিনিয়োগকারীদের সহায়তায়। বিনিয়োগের এই বিকল্প ফর্মটি সাধারণত কোনও সংস্থার প্রবৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে ঘটে যেখানে বিনিয়োগকারীরা ৩০% অবধি ইক্যুইটি প্রত্যাশা করতে পারে।  

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল হল পেশাদারভাবে পরিচালিত তহবিল যা বিনিয়োগ করা হয় বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড বা তহবিল সাধারণত কোন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম বা কোম্পানি দ্বারা গঠিত হয় । তারা সাধারণত ইক্যুইটির বিপরীতে একটি ব্যবসায় বিনিয়োগ করে এবং আইপিও বা অধিগ্রহণের সময় প্রস্থান করে। ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসায়ের মূল্যায়ন করে এবং ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে থাকে। এছাড়া পুরো তহবিলের তদারকি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম করে থাকে যার বিনিময়ে তাদের ব্যবস্থাপনা ফি দিতে হয়।  

ট্যাগ সমূহ

ব্যবসার জন্য পুঁজি সংগ্রহের বিভিন্ন উৎস, ব্যবসার জন্য পুঁজি, নতুন ব্যবসার জন্য লোন বাংলাদেশ, নতুন ব্যবসার উদ্যোগ, টেলকো ফান্ডিং, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, বিডি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, বিজনেস লোন, প্রধানমন্ত্রী ব্যবসা লোন, নারী উদ্যোক্তা ব্যাংক ঋণ, how to raise funds for business start up, how to raise money for a business without a loan, government funding for startups, ways to raise capital for a company, seed funding for startups, raise money for startup

Related

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব এড়াবার মন্ত্র | Technical students

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব - বাংলাদেশে প্রধান প্রধান আর্থসামাজিক সমস্যাগুলোর...

পলিটেকনিক ভর্তি : চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

পলিটেকনিক ভর্তি - পলিটেকনিক ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পর যারা...

বেসরকারি পলিটেকনিক – এ পড়ার সুবিধা অসুবিধা

বেসরকারি পলিটেকনিক - পলিটেকনিকে পড়তে ইচ্ছুকরা সবাই কিন্তু সরকারি...

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল প্রক্রিয়া

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল - ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির পর অনেকেই...

অটোমাইগ্রেশন / Auto Migration কি? যেভাবে অন / অফ করবেন

অটো মাইগ্রেশন / Auto Migration - পলিটেকনিকে ভর্তির ক্ষেত্রে...