যেকোন ক্যারিয়ারে দরকারি ৬টি সাধারণ দক্ষতা এবং অর্জনের উপায়

ক্যারিয়ারে দরকারি দক্ষতা – বর্তমানে ক্যারিয়ারে সফল হতে চাইলে মেধা এবং পরিশ্রমের পাশাপাশি এমন কিছু দরকারি দক্ষতা অর্জন করতে হয় যেগুলো সব ধরনের পেশাতেই প্রতিটি প্রার্থীর মধ্যে নিয়োগকর্তারা আশা করেন। এন্ট্রি-লেভেলের কর্মচারী থেকে শুরু করে এক্সিকিউটিভ সকলের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানকে সাফল্য পেতে এবং এগিয়ে যেতে সহায়তা করার জন্য এই ধরনের ব্যক্তিগত দক্ষতা থাকা জরুরি। এই দক্ষতাগুলির মধ্যে অনেকগুলি একাডেমিক অভিজ্ঞতা থেকে আসে এবং অন্যগুলো ইন্টার্নশীপ এবং বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। ক্যারিয়ারে দরকারি এ ধরনের দক্ষতা “Transferable Skills” বা “Soft Skills” নামেও পরিচিত।

এই ধরনের দক্ষতাগুলো প্রায় প্রতিটি পেশাতেই প্রয়োজন। নিয়োগকারীরা একজন যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে এই গুণগুলো আশা করে থাকেন। সাধারণ হলেও এই ধরনের দক্ষতা ক্যারিয়ারের সাফল্যের জন্য বেশ জরুরি।

প্রযুক্তিগত দক্ষতা

প্রযুক্তিগত দক্ষতা বলতে বোঝায় অর্থ কম্পিউটারের মাধ্যমে ওয়ার্ড প্রসেসরের বিভিন্ন রকম ব্যবহার জানা, স্প্রেডশিট ব্যবহার করে বিভিন্ন হিসাব এবং বাজেট তৈরি করতে জানা, ইমেল লিখা এবং পাঠানো, ফটোকপিয়ার ও প্রিন্টারের মত অফিস ডিভাইসগুলো ব্যবহার করতে জানা, পাওয়ার পয়েন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রেজেন্টেশন তৈরি এবং উপস্থাপন করতে জানা প্রভৃতি। কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ সহজ ভাবে পরিচালনার জন্য এই ধরনের দক্ষতা বেশ জরুরি।

যেসব উপায়ে ক্যারিয়ারে দরকারি এই প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিকাশ বা উন্নত করা যায়

  • শর্ট কোর্স বা অনলাইন কোর্স করতে পারেন।
  • কর্মক্ষেত্রে বাড়তি প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারেন।  
  • আপনি যে ধরনের কাজ করতে চান সেখানে কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তা জেনে সেই দক্ষতার উপর জোর দিতে পারেন।

টিমওয়ার্ক

টিমওয়ার্ক হল একটি টিমের মধ্যে সহজে এবং দক্ষতার সাথে কাজ করার সক্ষমতা। একটি টিমের সদস্যরা সবাই একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য একসাথে কাজ করে। এর ফলে প্রতি সদস্যের বিভিন্ন গুণাবলি অন্যদের প্রভাবিত করে। তেমন কিছু গুণাবলি হল-

  • দলের সদস্যদের আরও ভাল পারফরম্যান্সে উত্সাহিত ও অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা।
  • আপোস করার এবং নিজের অহংকারকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা।
  • দলের সদস্যদের আচরণ বুঝতে পারা।
  • যোগাযোগ এবং অন্যান্য আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা যেমন সমঝোতা, প্রভাবিত করা, পরামর্শ দেওয়া এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা।

যেসব উপায়ে আপনার টিমওয়ার্ক দক্ষতা বিকাশ বা উন্নত করতে পারেন-

  • পড়াশুনা করার অংশ হিসাবে গ্রুপ অ্যাসাইনমেন্ট করা।
  • বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা।
  • আপনি কীভাবে আপনার কর্মক্ষেত্রে অন্য ব্যক্তির সাথে আরও ভাল কাজ করতে পারেন এ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা।

সমস্যা সমাধানে দক্ষতা

কর্মক্ষেত্রে নিজেকে দক্ষ একজন হিসেবে উপস্থাপনের জন্য দ্রুত সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা খুবি কার্যকরী একটি মাধ্যম। সমস্যাগুলি যখনই আসবে তখন কীভাবে সমাধান করবেন তা আপনার জানতে হবে। কর্মক্ষেত্রে বহুমুখী হতে এবং সমস্যাগুলি সামনে আসার সাথে সাথে সমাধান করার জন্য আপনার জটিল চিন্তাভাবনায় দক্ষতা থাকা দরকার।

সমস্যা-সমাধানে দক্ষ হলে আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে সহজ এবং সুন্দর ভাবে দ্রুত হাতের কাজগুলো শেষ করা যায়। এছাড়া আপনি নিজের কর্মক্ষেত্রে কোন আইডিয়া, পণ্য বা সেবা সম্পর্কেও নতুন ধারণা এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারবেন।

যেসব উপায়ে সমস্যা সমাধানে দক্ষতা বিকাশ বা উন্নীত করা যায়-

  • কর্মক্ষেত্রে সমস্যাগুলো মোকাবেলা করার মাধ্যমে।
  • স্কিল কোর্স করা যা সমস্যা সমাধানে আপনার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।
  • অন্যান্য মানুষের সাথে কথা জানা যে তারা যখন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল কিভাবে সমাধান করেছে।

যোগাযোগ

ক্যারিয়ারে উন্নতির জন্য দরকারি অন্যতম একটি দক্ষতা হল এটি। যোগাযোগের অর্থ আপনি যখন কিছু বুঝাতে চান তা পরিষ্কার ভাবে ব্যক্ত করার সামর্থ এবং যখন কিছু বলছেন বা লিখছেন তখন তা সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশ করা। এর মধ্যে অন্যের বক্তব্য সঠিক ভাবে বুঝতে পারা এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করাও অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে যোগাযোগের ধরন মৌখিক এবং অমৌখিক উভয়ই হতে পারে।

যেসব উপায়ে যোগাযোগের দক্ষতা বিকাশ বা উন্নীত করা যায়-

  • পড়াশুনার অংশ হিসাবে অ্যাসাইনমেন্ট এবং রিপোর্ট লিখার মাধ্যমে।
  • ব্লগিং বা সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে।
  • ক্লাসের কাজের অংশ হিসেবে ওরাল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে।
  • কাস্টমার সার্ভিসে কাজ করার মাধ্যমে (মুখোমুখি বা ফোনে)।

আত্ম পরিচালনা

কোন চাকরিই পুরোপুরি স্ট্রেস মুক্ত হয় না এবং আপনি কোন ধরনের ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছেন তার উপর নির্ভর করে স্ট্রেসের পরিমাণ কেমন হতে পারে। তবে এই স্ট্রেসের পরিমাণ অনেক খানিই কমতে পারে আত্ম পরিচালনার মাধ্যমে। আত্ম পরিচালনা অর্থে বোঝানো হচ্ছে-

  • সারাক্ষণ অন্যের চেকআপে না থেকে নিজের কাজ করতে সক্ষম হওয়া।
  • সবসময় নিজের ডেডলাইনে কাজ এগিয়ে রাখা।
  • ডেডলাইনে কাজ সম্পন্ন করার জন্য অন্য লোকের কাছে অর্পিত কাজ সময়মত তুলে নেয়া।  
যেসব উপায়ে আত্ম পরিচালনা বিকাশ বা উন্নীত করা যায়-
  • ইন্টার্নশিপ করা।
  • কর্মক্ষেত্রে নতুন দায়িত্ব দেয়ার জন্য বলা।
  • একটি স্টাডি শিডিউল তৈরি করা এবং সে অনুযায়ী চলা।
  • কোন স্বেচ্ছাসেবক প্রতিষ্ঠানে যোগদান।

শিখার প্রতি আগ্রহ

শিখার প্রতি আগ্রহ বলতে নতুন ধারণা এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের আগ্রহ বোঝায়। শিখতে আগ্রহী একজন ব্যক্তি পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে উন্মুখ থাকে এবং সেই অনুযায়ী দক্ষতা এবং জ্ঞান উন্নত করার চেষ্টা করে।

সময়ের প্রয়োজনে বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন টেকনোলজির ব্যবহার, পলিসি, কাজের ধরনে পরিবর্তন হতে থাকে। এবং প্রতিষ্ঠান সেইসব কর্মীদের উপর সন্তুষ্ট থাকে যারা এই সর্বদা পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যেতে পারে।  

ট্যাগ

ক্যারিয়ার প্রস্তুতি, নিজেকে দক্ষ করার উপায়, ক্যারিয়ার গাইড, কিভাবে স্কিল ডেভেলপমেন্ট, সফট স্কিল, professional skills, job skills definition, skill set, skills for resume

Related

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব এড়াবার মন্ত্র | Technical students

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব - বাংলাদেশে প্রধান প্রধান আর্থসামাজিক সমস্যাগুলোর...

পলিটেকনিক ভর্তি : চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

পলিটেকনিক ভর্তি - পলিটেকনিক ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পর যারা...

বেসরকারি পলিটেকনিক – এ পড়ার সুবিধা অসুবিধা

বেসরকারি পলিটেকনিক - পলিটেকনিকে পড়তে ইচ্ছুকরা সবাই কিন্তু সরকারি...

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল প্রক্রিয়া

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল - ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির পর অনেকেই...

অটোমাইগ্রেশন / Auto Migration কি? যেভাবে অন / অফ করবেন

অটো মাইগ্রেশন / Auto Migration - পলিটেকনিকে ভর্তির ক্ষেত্রে...