ইন্টার্নশীপ টুকিটাকি কোথায় খুঁজবেন, পুর্বপ্রস্তুতি এবং অন্যান্য

ইন্টার্নশীপ – ইন্টার্নশিপকে বলা যেতে পারে শিক্ষাজীবন এবং পেশাগত জীবনের মাঝখানের ট্রাঞ্জিশন পিরিয়ড। আজকাল চাকরিতে অভিজ্ঞতা ছাড়া আবেদনই করা যায় না। সে ক্ষেত্রে ইন্টার্নশীপ সদ্য পড়ালেখা শেষ করা শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতার অভাবটা কিছুটা হলেও পুরন করে।

বর্তমানে ইন্টার্নশিপ ফুল টাইম চাকরির মতো এবং ইন্টার্ন হিসাবে আপনাকে একজন ফুল টাইম চাকুরে হিসাবে কাজ করতে হয়। ইন্টার্নশীপ সাধারণত সবেতন এবং বিনা বেতন এই দুই ধরনের হয়। এই লিখাটি মূলত ইন্টার্নশীপ কিভাবে খুঁজে পেতে পারেন, কি ধরনের পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হয় এবং নতুন কাজের পরিবেশের সাথে দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে কিভাবে খাপ খেয়ে সফলতার সাথে ইন্টার্নশীপ সম্পন্ন করা যায় সেই আলোকে সাজানো।

ইন্টার্নশীপ খোজ করবেন যেভাবে 

১। ক্যারিয়ার কাউন্সিলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ক্যারিয়ার সেন্টার থাকে। সেখানে ক্যারিয়ার কাউন্সিলরদের কাছে বর্তমান এবং পূর্বে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপের ব্যাপারে তথ্য থাকে।  তারা এলাকাভিত্তিক এবং এমনকি জাতীয়ভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন-ক্যাম্পাস নিয়োগকারীদের সাথে কাজ করে থাকেন। সুতরাং, ক্যারিয়ার কাউন্সিলার আপনার জন্য ইন্টার্নশিপের উত্স হতে পারে।

২। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক – ক্যারিয়ার কাউন্সিলারদের মতো আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছেও তথ্য থাকতে পারে যে শিক্ষার্থীরা এখন কোথায় ইন্টার্ন করছেন বা আগে কোথায় ইন্টার্ন করেছেন। এছাড়া অনেক শিক্ষক একাডেমির বাইরে বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সাথে পরামর্শ, গবেষণা এবং অন্যান্য কাজের সম্পর্ক থাকে। এইভাবে তারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামগুলি সম্পর্কে আপনাকে তথ্য দিতে পারবে।

৩। পরিবার ও পরিচিতজনদের মাঝে নেটওয়ার্কিং – পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন আত্মীয় এবং পরিচিতজনদের মাধ্যমেও আপনি ইন্টার্নশীপের সুযোগ পেতে পারেন। কারণ তাদের অনেকেই বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকেন যেখানে হয়তো ইন্টার্নশীপের সুযোগ আছে।

৪। সহপাঠী এবং বন্ধুদের মাঝে নেটওয়ার্কিং – আপনার সহপাঠী ও বন্ধুদের মাঝে অনেকেরই পরিচিত কিংবা আত্মীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। যারা আপনার ইন্টার্নশীপ পাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। কিংবা এই সহপাঠী এবং বন্ধুদের মাঝে অনেকেই হয়তো ইন্টার্নশীপ করছে এবং তাদের কাছে এরকম আরও সুযোগের ব্যাপারে তথ্য আছে। যার ফলে তাদের প্রতিষ্ঠানে বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে আপনাকে তারা সুযোগ করে দিতে পারে।

৫। জব ফেয়ার – আজকাল অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই জব ফেয়ারের আয়োজন করে থাকে। এখানে অনেক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে থাকে যারা ইন্টার্নশীপ এবং জবের জন্য সিভি গ্রহণ করে থাকে।

৬। ইন্টারনেটের মাধ্যমে – ইন্টারনেটে চাকরির বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং অ্যাপে অনেক সময় ইন্টার্নশীপের খোজ পাওয়া যায়। এছাড়া এমনিতেও ইন্টার্নশীপ এবং নিজের এলাকা লিখে সার্চ করলেও আশেপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগ থাকলে জানা যায়।

ইন্টার্নশীপের পুর্বপ্রস্তুতি

  • কোন চাকরি বা ইন্টার্নশীপের জন্য সিভি খুব গুরত্বপূর্ণ। কারণ নিয়োগকারীদের কাছে এটি আপনাকে উপস্থাপন করে এবং এটি আপনাকে ইন্টারভিউতে পৌঁছে দিতে পারে। সিভি তৈরি করতে হবে নির্ভুল ভাবে। এতে কোন রকম মিথ্যা বা ভুল তথ্য রাখা যেন না থাকে। সাথে ভালো ফর্মেটের কভার লেটার থাকলে আরও ভালো হয়।
  • ইন্টারভিউর প্রস্তুতি নিন। প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে খোজ খবর নিন এবং প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন টপিক নিয়ে পড়াশুনা করুন।
  • লক্ষ্য নির্ধারন করুন। কি ধরনের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে চান, কোন ধরনের কাজের প্রতি আপনি আগ্রহী, বিনা বেতনে করতে আগ্রহী কিনা, কি ধরনের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করলে আপনার ক্যারিয়ারের জন্য লাভবান হবেন – এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসুন।
  • মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, ইমেইল, ইন্টারনেটের উপর দক্ষতা বাড়ান। এর পাশাপাশি যোগাযোগ এবং রিপোর্ট লেখার মত ব্যাপারগুলোও আয়ত্ত করুন।

সাফল্যের সাথে ইন্টার্নশীপ সম্পন্ন করার কিছু কৌশল

  • আপনার শিক্ষার্থীর স্ট্যাটাসের সদ্ব্যবহার করুন এবং আপনি বুঝতে পারছেন না এমন সব বিষয়ে যত দরকার প্রশ্ন করুন। প্রয়োজনে সব সময় একটি নোটবুক সাথে রাখুন এবং নোট নিন। এর ফলে নিয়োগকর্তা বুঝতে পারবেন যে কাজ এবং এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানতে কতটুকু উৎসুক এবং শিখতে আগ্রহী। ইন্টার্ন হিসাবে আপনি চাকরী বা কাজ সম্পর্কে সমস্ত কিছু জানবেন তারা এটা আশা করেন না। ইন্টার্নশীপ পেশদারি অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষার জন্য ভালো একটি মাধ্যম এবং আপনি যত বেশি প্রশ্ন করবেন তত বেশি কাজ সম্পর্কে এবং ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে পরিচালিত হয় এ সম্পর্কে জানতে পারবেন।   
  • আপনার সুপারভাইজার এবং সহকর্মীদের সাথে আন্তরিক যোগাযোগ রক্ষা করুন এবং নিজেকে অফিসের কমিউনিকেশন লুপের মধ্যে রাখুন। পেশাদারি সম্পর্ক একটি সফল ক্যারিয়ার শুরু করার মূল চাবিকাঠি। আপনার কর্মজীবন জুড়ে একটি পেশাদার নেটওয়ার্ক আপনাকে বিভিন্ন নতুন কর্মের সুযোগ সম্পর্কে জানতে এবং আপনার কর্মক্ষেত্রে অগ্রগতিতে সহায়তা করবে।  
  • হ্যাঁ, আপনার লক্ষ্য প্রাথমিক ভাবে যদিও সফলভাবে আপনার ইন্টার্নশিপটি সম্পূর্ণ করা, আপনার সুপারভাইজারদের মুগ্ধ করা এবং সম্ভব হলে চাকরির সুযোগ পাওয়া। কিন্তু এই ইন্টার্নশিপের সময় আপনি কী শিখবেন এবং কী অর্জন করবেন সে সম্পর্কে আপনার নিজের একটি লক্ষ্য থাকা জরুরি।
  • কাজের প্রতি উদ্যামী হোন এবং মিটিং ও প্রফেশনাল কর্মশালায় আপনাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য অনুরোধ করুন। আপনার ইন্টার্নশিপ শেষ হওয়ার পরে যদি আপনি সেখানে ফুল টাইম জবের আশা করে থাকেন তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে একজন উত্সাহী কর্মীর গুণাবলী প্রদর্শন করুন যাতে আপনার সহকর্মী এবং তদারককারী উভয়ের উপরই আপনি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেন।
  • আপনি যে প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছেন সেটা সম্পর্কে জানুন। তারা কী করে, এই ইন্ডাস্ট্রিতে তাদের অবস্থান কেমন এবং মূল নির্বাহীরা কারা। আপনি যদি ইন্টার্নশীপের সেই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করার আশা করেন তবে এই জাতীয় জ্ঞান এবং প্রস্তুতি আপনাকে বেশ সাহায্য করবে।
  • আপনি কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছেন তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।  সময় মত উপস্থিতি, উপযুক্ত এবং পরিপাটি পোশাক, কাজের প্রতি আন্তরিকতা আপনাকে একজন উৎসাহী এবং সিরিয়াস ইন্টার্ন হিসেবে উপস্থাপন করে।
  • আপনার মেন্টরকে দেখান যে আপনি তাদের সাপোর্টের জন্য কৃতজ্ঞ। কেউ আপনাকে নতুন কিছু শেখালে, কোনও কাজে আপনাকে সহায়তা করলে তাকে অকৃপণভাবে ধন্যবাদ জানান। এর ফলে কর্মক্ষেত্রে মানুষের সাথে আপনার সম্পর্ক আরও আন্তরিক হবে যা কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে সহযোগিতা করবে।
  • লিখিত এবং মৌখিক উভয় যোগাযোগ দক্ষতায় পারদর্শিতা অর্জন করুন। আপনার সহকর্মীদের সাথে কথা বলার সময় সবসময় শ্রদ্ধাশীল, কৌশলী এবং পেশাদার ভাষা ব্যবহার করুন।
  • আপনার সাথে কাজ করতে যেন তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কোন কাজ দেয়া হলে নিজের সেরাটুকু দিয়ে কাজটি করুন এবং আরও কাজ খুঁজে নিন। কাজের জন্য দেয়া ইন্সট্রাকশন ভালো মত বুঝে নিন, প্রয়োজনে প্রশ্ন করে জেনে নিন। কোন টিমে কাজ করার ক্ষেত্রে অন্যের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং কম্প্রোমাইজ করার মানসিকতা থাকতে হবে।
  • যখন আপনার বিদায়ের সময় চলে আসবে তখন আপনার সুপারভাইজারকে অবশ্যই একটি সুপারিশের চিঠির দেয়ার জন্য বলুন এবং তার সাথে যোগাযোগ রাখুন যাতে যদি কোন রেফারেন্সের প্রয়োজন হয় তখন আপনি তাকে ফোন করতে পারেন। এর ফলে ভবিষ্যতে কোন চাকরির সুযোগ আসলে আপনার কথা তার মাথায় থাকবে। 

ট্যাগ

ইন্টার্নশিপ রিপোর্ট, ইন্টার্নশিপ এর গুরুত্ব, ইন্টার্নশিপ সুযোগ, ইন্টার্নশিপ কাকে বলে, ইন্টার্নশিপের গুরুত্ব, how to get an internship, wikihow internship, what to do before an internship, how to prepare for a marketing internship

Related

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব এড়াবার মন্ত্র | Technical students

কারিগরি শিক্ষার্থীদের বেকারত্ব - বাংলাদেশে প্রধান প্রধান আর্থসামাজিক সমস্যাগুলোর...

পলিটেকনিক ভর্তি : চান্স প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের জন্য গুরত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

পলিটেকনিক ভর্তি - পলিটেকনিক ভর্তির ফলাফল প্রকাশের পর যারা...

বেসরকারি পলিটেকনিক – এ পড়ার সুবিধা অসুবিধা

বেসরকারি পলিটেকনিক - পলিটেকনিকে পড়তে ইচ্ছুকরা সবাই কিন্তু সরকারি...

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল প্রক্রিয়া

পলিটেকনিক ভর্তি বাতিল - ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তির পর অনেকেই...

অটোমাইগ্রেশন / Auto Migration কি? যেভাবে অন / অফ করবেন

অটো মাইগ্রেশন / Auto Migration - পলিটেকনিকে ভর্তির ক্ষেত্রে...